স্বদেশ ডেস্ক:
ছাত্রছাত্রীদের এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি-হয়রানি লাঘবের লক্ষ্যে এ বছর ২০২০-২০২১ সেশন থেকে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবর্ষ স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি করার জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে (এঝঞ-এবহবৎধষ, ঝপরবহপব ্ ঞবপযহড়ষড়মু) ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ পদ্ধতির কারণে এরই মধ্যে প্রাথমিক পরীক্ষার আসন বিন্যাস অনেক ছাত্রছাত্রীর হয়রানি ও চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দ্বিতীয়বার (চূড়ান্ত) আবার আবেদন করার ঝামেলার সাথে অর্থব্যয়ের প্রশ্নও রয়েছে এবং বিজ্ঞপ্তিতে অস্পষ্টতার জন্য ভার্সিটি ও বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হবে। এসব বিষয় নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছেন।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে দেশের ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ মোট ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটি গুচ্ছ করা হয়েছে। এ গুচ্ছের সমন্বিত ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর এবং সচিব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।
সচিব স্বাক্ষরিত ভর্তির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দুইবার আবেদন করতে হবে। প্রাথমিক আবেদন গুচ্ছ পদ্ধতিতে করে এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এ পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে চূড়ান্ত আবেদনের যোগ্য বিবেচিত শিক্ষার্থীরা গুচ্ছভুক্ত ভার্সিটিগুলোর মধ্যকার পছন্দেরটিতে আবেদন করতে পারবেন।
অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও ভার্সিটি শিক্ষকদের সূত্রে জানা যায়, গুচ্ছ পদ্ধতিতে প্রাথমিক পরীক্ষার আসন বিন্যাস নিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রী বড় রকমের ঝামেলায় পড়েছেন। সব ছাত্রছাত্রীই আবেদনপত্রের চাওয়া মোতাবেক তাদের অবস্থানের কাছাকাছি পাঁচ পরীক্ষাকেন্দ্রের অপশন দিয়েছেন। এখন প্রবেশপত্র পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে ,খুলনার অনেকে আসন পেয়েছেন গোপালগঞ্জ বা পটুয়াখালী। ঢাকার অনেকের পরীক্ষা দিতে আসতে হবে খুলনায়। বেশি বিপদ হয়েছে তাদের যারা আসন পেয়েছেন আরো দূরে এবং সেখানে যাওয়ার সরাসরি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই। রংপুর, বগুড়া, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার কারো কারো পরীক্ষা কেন্দ্র নির্ধারিত হয়েছে গোপালগঞ্জ বা পটুয়াখালী। গোপালগঞ্জ বা পটুয়াখালী শহরে আবাসন সঙ্কট থাকায় অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গা নিয়েও বিপদ। সমন্বিত ভর্তি কমিটি এ সমস্যায় কান দিতে ইচ্ছুক নন। তাদের সাফ কথা, যার যেখানে আসন পড়েছে সেখানে গিয়েই পরীক্ষা দিতে হবে। অথচ সমস্যাটির সহজ সমাধান করা যেত। সারা দেশে নেয়া ২৮টি কেন্দ্রের সাথে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যান্য জায়গায় প্রয়োজন মতো কেন্দ্র দু-একটি কেন্দ্র বেশি নিলেই হতো।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, এ ইউনিট বিজ্ঞান, বি ইউনিট মানবিক এবং সি ইউনিট বাণিজ্যের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করা ছাত্রছাত্রীদের চারটি আবশ্যিক বিষয় যেমন পদার্থ, রসায়ন, বাংলা এবং ইংরেজিতে মোট ৬০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। এ ছাড়াও জীববিদ্যা অঙ্ক এবং আইসিটি এ তিনটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো দু’টি বিষয়ে ৪০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীরা কোনো দু’টি বিষয় পরীক্ষা দিলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কোন বিষয়ে ভর্তির জন্য অপশন দিতে পারবে বিজ্ঞপ্তিতে তার উল্লেখ না থাকায় তারা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছে। তাদের প্রশ্ন একজন ছাত্র বা ছাত্রী যদি জীববিজ্ঞান এবং আইসিটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করে তখন সে কি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় যেমন কম্পিউটার সায়েন্স, আর্কিটেকচার, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা টেক্সটাইলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে পারবে? অথবা কোনো ছাত্র বা ছাত্রী যদি অঙ্ক এবং আইসিটি পরীক্ষা দিয়ে পাস করে তখন সে কি লাইফ সাইন্স বা জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন সাবজেক্ট যেমন ফার্মাসি, বায়োটেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফরেস্ট্রি, ফিশারিজ, মলিকুলার বায়োলজি বা মাইক্রোবায়োলোজিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে? যদিও বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ওই ছাত্র বা ছাত্রীকে যে কোনো দু’টি বিষয় পরীক্ষা দেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।
এ সমস্যাটি গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত কমিটির কোনো কোনো সদস্য সভায় উপস্থাপন করেছিলেন বলে সভার একটি সূত্রে জানা যায়। কিন্তু কমিটিতে নেতৃত্ব দানকারীরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে না নিয়ে বলে দেন যে, এমসিকিউ পরীক্ষার ফলাফলের পর বিভিন্ন বিশবিদ্যালয় তাদের চাহিদা মোতাবেক নতুন শর্তাবলি যুক্ত করে বিজ্ঞপ্তি বা প্রসপেক্টাস প্রকাশ করবে। অথচ বিজ্ঞপ্তি বলে দেয়া কঠিন ছিল না। যেমন ঢাকা ভার্সিটি বিজ্ঞপ্তি দেয়ার সাথেই সব বিস্তারিতভাবে বলে দেয়। অথবা পরীক্ষা গ্রহণের পূর্বেই ওই শর্তাবলি প্রকাশ করা প্রয়োজন ছিল।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিজ্ঞপ্তি প্রসপেক্টাস আকারে ইতোমধ্যেই তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট এ রকম নির্দেশনা নেই। ফলে অপশনাল বিষয় নির্বাচনে ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় বা বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে না।
এ ব্যাপারে এক ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে উদ্বেগ নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের সাথে কথা বলা হলে তিনি ভর্তির বিজ্ঞপ্তিতে কিভাবে এটা উপেক্ষা করা হলো সে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তারা এটা নিয়ে কাজ করছেন এবং ১৫ তারিখের মধ্যে শাবিপ্রবির মতো প্রসপেক্টাস প্রকাশ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ভর্তি সমন্বয় কমিটির সচিব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামানের মোবাইলে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।